বায়না দলিল কি? [মেয়াদ ও আইনগত গুরুত্ব]

জমি বা ফ্ল্যাট কেনা-বেচার ক্ষেত্রে পুরো টাকা একবারে পরিশোধ করা অনেক সময়ই সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে একটি প্রাথমিক চুক্তি হয়, যা বায়নাপত্র বা বায়না দলিল (Agreement for Sale) নামে পরিচিত। এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আইনি নথি যা উভয় পক্ষকে একটি বড় লেনদেনের জন্য আইনগতভাবে আবদ্ধ করে।

এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করব বায়না দলিল কী, কেন এটি জরুরি, এর মেয়াদ কতদিন এবং চুক্তি ভঙ্গ হলে কী করণীয়।

bayna doliil ki

বায়না দলিল কি?

বায়না দলিল হলো একটি লিখিত ও রেজিস্ট্রিকৃত চুক্তি যেখানে বিক্রেতা ভবিষ্যতে একটি নির্দিষ্ট তারিখে বা নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ সাপেক্ষে তার সম্পত্তি ক্রেতার কাছে বিক্রি করার জন্য সম্মত হন এবং ক্রেতা সেই সম্পত্তি কেনার জন্য একটি অগ্রিম অর্থ (বায়নার টাকা) বিক্রেতাকে প্রদান করেন।

এটি কোনো চূড়ান্ত বিক্রয় দলিল (সাফ কবলা) নয়, বরং এটি একটি বিক্রয় চুক্তি যা উভয় পক্ষকে কেনা-বেচা সম্পন্ন করতে বাধ্য করে।

জেনে নিনঃ জমির দলিল কি?

কেন বায়না দলিল করা জরুরি?

  • আইনি সুরক্ষা: বায়না দলিল রেজিস্ট্রি করা থাকলে কোনো পক্ষই খেয়াল-খুশি মতো চুক্তি থেকে সরে যেতে পারে না। এটি ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়কেই সুরক্ষা দেয়।
  • ক্রেতার সুরক্ষা: ক্রেতা বায়নার মাধ্যমে সম্পত্তিটি একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিজের অনুকূলে লক করে ফেলতে পারেন। এই সময়ের মধ্যে বিক্রেতা অন্য কারো কাছে সম্পত্তিটি বিক্রি করতে পারেন না।
  • বিক্রেতার সুরক্ষা: ক্রেতা যদি নির্ধারিত সময়ে বাকি টাকা পরিশোধ করে সম্পত্তি রেজিস্ট্রি করে না নেন, তবে বিক্রেতা আইন অনুযায়ী বায়নার টাকা বাজেয়াপ্ত করতে পারেন (যদি চুক্তিতে উল্লেখ থাকে) এবং অন্য ক্রেতার কাছে সম্পত্তি বিক্রি করতে পারেন।
  • মূল্য নির্ধারণ: সম্পত্তির মোট মূল্য এবং পরিশোধের পদ্ধতি চুক্তিতেই চূড়ান্ত হয়ে যায়, ফলে भविष्यতে দাম বাড়া বা কমা নিয়ে কোনো বিবাদের সুযোগ থাকে না।

বায়না দলিলে কী কী বিষয় উল্লেখ থাকা আবশ্যক?

একটি আদর্শ বায়না দলিলে নিচের বিষয়গুলো পরিষ্কারভাবে উল্লেখ থাকা উচিত:

  • ক্রেতা ও বিক্রেতার সম্পূর্ণ পরিচয়।
  • বিক্রয় সম্পত্তির পূর্ণাঙ্গ তফসিল।
  • সম্পত্তির মোট মূল্য।
  • বায়না বাবদ প্রদত্ত অর্থের পরিমাণ।
  • বাকি টাকা পরিশোধের সময়সীমা ও পদ্ধতি।
  • কোন তারিখের মধ্যে সাফ কবলা দলিল রেজিস্ট্রি করা হবে তার উল্লেখ।
  • চুক্তি ভঙ্গের শর্তাবলী (কোন পক্ষ চুক্তি ভঙ্গ করলে কী পরিণতি হবে)।

বায়না দলিলের মেয়াদ ও রেজিস্ট্রেশন

রেজিস্ট্রেশন: সম্পত্তি হস্তান্তর আইন অনুযায়ী, বায়না দলিল অবশ্যই রেজিস্ট্রি করতে হবে। রেজিস্ট্রেশন ছাড়া বায়নাপত্রের আইনগত ভিত্তি খুবই দুর্বল।

মেয়াদ: বায়না দলিল রেজিস্ট্রি করার তারিখ থেকে ১ (এক) বছর পর্যন্ত কার্যকর থাকে, যদি না দলিলে এর চেয়ে কম বা বেশি কোনো সময়সীমা উল্লেখ করা হয়। এই সময়ের মধ্যেই সাফ কবলা দলিল রেজিস্ট্রি করতে হয়।

চুক্তি ভঙ্গ হলে করণীয় কী?

বিক্রেতা চুক্তি ভঙ্গ করলে: যদি বিক্রেতা বায়নার টাকা নিয়েও নির্ধারিত সময়ে দলিল রেজিস্ট্রি করে দিতে অস্বীকৃতি জানান, তবে ক্রেতা আদালতে “চুক্তি প্রবলের” (Specific Performance of Contract) মামলা করতে পারেন। আদালত সবকিছু যাচাই করে বিক্রেতাকে দলিল রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার জন্য আদেশ দিতে পারেন।

ক্রেতা চুক্তি ভঙ্গ করলে: যদি ক্রেতা নির্ধারিত সময়ে বাকি টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হন, তবে বিক্রেতা বায়না দলিলটি বাতিল করার জন্য আদালতে মামলা করতে পারেন। এক্ষেত্রে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী বিক্রেতা বায়নার টাকা বাজেয়াপ্ত করার অধিকার রাখতে পারেন।

সাধারণ জিজ্ঞাসাসমূহ (FAQs)

১. বায়না করা সম্পত্তি কি কেনা নিরাপদ?

উত্তরঃ হ্যাঁ, যদি বায়না দলিলটি আইন অনুযায়ী রেজিস্ট্রি করা থাকে এবং আপনি বিক্রেতার মালিকানা সঠিকভাবে যাচাই করে থাকেন, তবে বায়না করা সম্পত্তি কেনা নিরাপদ।

২. বায়না দলিলের রেজিস্ট্রি খরচ কেমন?

উত্তরঃ বায়না দলিলের রেজিস্ট্রি খরচ তুলনামূলকভাবে কম। সরকার কর্তৃক নির্ধারিত একটি নির্দিষ্ট ফি প্রদান করতে হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top