উইল (Will) একটি শব্দ যা আমাদের সকলের কাছেই পরিচিত। এটি এমন একটি আইনি ব্যবস্থা যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি তার মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া সম্পত্তির বিলিব্যবস্থা সম্পর্কে নির্দেশনা দিয়ে যেতে পারেন। যে দলিলের মাধ্যমে এই ইচ্ছাপত্র তৈরি করা হয়, তাকে উইল দলিল বলা হয়।
তবে উইল করার ক্ষেত্রে প্রত্যেক ধর্মাবলম্বীর জন্য নির্দিষ্ট আইন ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এই আর্টিকেলে আমরা উইল দলিল কী, এটি কার্যকর করার নিয়ম এবং বিশেষ করে মুসলিম ও হিন্দু আইনে এর সীমাবদ্ধতা নিয়ে আলোচনা করব।
উইল দলিল কি?
উইল দলিল হলো একটি আইনসম্মত লিখিত ঘোষণা যার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি (যিনি উইল করছেন তাকে উইলদাতা বা Testator বলা হয়) তার মৃত্যুর পর তার সম্পত্তির কে বা কারা, কী পরিমাণে মালিক হবেন সেই বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করেন। উইলটি উইলদাতার মৃত্যুর পরই কেবল কার্যকর হয়।
জেনে নিনঃ জমির দলিল কি?
উইলের মূল বৈশিষ্ট্য:
- মৃত্যুর পর কার্যকর: উইলদাতা তার জীবদ্দশায় যেকোনো সময় উইলটি বাতিল বা পরিবর্তন করতে পারেন। এটি কেবল তার মৃত্যুর পরই চূড়ান্তভাবে কার্যকর হয়।
- লিখিত ও স্বাক্ষরিত: উইলটি অবশ্যই লিখিত হতে হবে এবং উইলদাতার স্বাক্ষর থাকতে হবে।
- সাক্ষী: উইলটি কমপক্ষে দুজন সাক্ষী দ্বারা সত্যায়িত হতে হবে, যারা উইলদাতার স্বাক্ষর করা দেখেছেন।
মুসলিম আইনে উইলের সীমাবদ্ধতা
ইসলামিক শরিয়া আইন অনুযায়ী, একজন মুসলমান ব্যক্তির উইল করার ক্ষমতার উপর কিছু গুরুত্বপূর্ণ সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে:
১. এক-তৃতীয়াংশের সীমাবদ্ধতা: একজন মুসলমান তার সকল ঋণ ও দেনা পরিশোধ করার পর অবশিষ্ট সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশ (1/3)-এর বেশি উইল করতে পারবেন না।
২. উত্তরাধিকারীর অনুকূলে উইল নয়: তিনি তার কোনো আইনসম্মত উত্তরাধিকারীর (Heir) (যেমন: সন্তান, স্ত্রী, বাবা-মা) অনুকূলে উইল করতে পারবেন না। যদি তিনি তা করেন, তবে তার মৃত্যুর পর অন্যান্য সকল উত্তরাধিকারীরা সম্মতি দিলেই কেবল সেই উইল কার্যকর হবে।
উদাহরণ: একজন মুসলিম ব্যক্তির যদি এক ছেলে ও এক মেয়ে থাকে, তিনি তার কোনো বন্ধুকে তার সম্পত্তির সর্বোচ্চ এক-তৃতীয়াংশ উইল করে দিতে পারবেন। কিন্তু তিনি তার ছেলেকে বা মেয়েকে উইল করতে পারবেন না, কারণ তারা শরিয়া অনুযায়ী স্বাভাবিক উত্তরাধিকারী।
হিন্দু আইনে উইল
হিন্দু আইন অনুযায়ী, একজন হিন্দু ব্যক্তি তার পৈতৃক বা স্ব-অর্জিত যেকোনো সম্পত্তির পুরোটাই যেকোনো ব্যক্তিকে উইল করে দেওয়ার অধিকার রাখেন। মুসলিম আইনের মতো এক-তৃতীয়াংশের কোনো সীমাবদ্ধতা এখানে নেই।
উইলের রেজিস্ট্রেশন ও প্রবেট (Probate)
- রেজিস্ট্রেশন: উইলের রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক নয়। তবে রেজিস্ট্রি করা থাকলে भविष्यতে এটি প্রমাণ করা সহজ হয় এবং জালিয়াতির সম্ভাবনা কমে।
- প্রবেট: উইলদাতার মৃত্যুর পর উইলটি কার্যকর করার জন্য আদালত থেকে একটি অনুমতিপত্র নিতে হয়, যাকে প্রবেট (Probate) বলে। প্রবেট হলো আদালতের একটি ঘোষণা যে, উইলটি বৈধ এবং সর্বশেষ উইল। প্রবেট ছাড়া উইলের সম্পত্তি হস্তান্তর করা যায় না।
উইল এবং হেবার মধ্যে পার্থক্য
বৈশিষ্ট্য | উইল দলিল | হেবা দলিল |
কার্যকারিতা | দাতার মৃত্যুর পর কার্যকর হয়। | দাতার জীবদ্দশায় তাৎক্ষণিক কার্যকর হয়। |
বাতিল | দাতা যেকোনো সময় বাতিল করতে পারেন। | দখল হস্তান্তর হয়ে গেলে বাতিল করা যায় না। |
সম্পত্তির পরিমাণ | মুসলিম আইনে ১/৩-এর সীমাবদ্ধতা আছে। | দাতা তার সম্পূর্ণ সম্পত্তি হেবা করতে পারেন। |
সাধারণ জিজ্ঞাসাসমূহ (FAQs)
১. উইল কার্যকর করে কে?
উত্তরঃ উইলে সাধারণত একজন নির্বাহক (Executor) নিযুক্ত করা থাকে, যিনি উইলদাতার মৃত্যুর পর তার নির্দেশনা অনুযায়ী সম্পত্তি বণ্টন করার দায়িত্ব পালন করেন।
২. উত্তরাধিকারী না থাকলে কি সম্পূর্ণ সম্পত্তি উইল করা যায়?
উত্তরঃ যদি কোনো মুসলমান ব্যক্তির কোনো উত্তরাধিকারী না থাকে, তবে তিনি তার সম্পূর্ণ সম্পত্তি উইল করতে পারেন।